লেখক পরিচিতিঃ পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিক। ইংরেজ শাসন শেষ হয়ে গেলেও, তখনও ভারত ছাড়েননি সাহেবরা। কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানকারই হাইকোর্টে তখন ওকালতি করছেন এক ইংরেজ ব্যারিস্টার— নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েল। তাঁর কাছে হাজির হলেন এক বাঙালি তরুণ। কিন্তু বড় নামে উচ্চারণে অসুবিধে। অতএব, ছোটো হল নাম। সেদিন থেকেই, ‘মণিশংকর মুখোপাধ্যায়’ হয়ে গেলেন ‘শংকর'। ১৯৩৩ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বপরিবারে হাওড়ায় চলে আসা ও বেড়ে ওঠা, বিচিত্র কর্মসংস্থান ও সাহিত্য সাধনা। বড়ো বড়ো সাহিত্যের আসর এড়িয়ে গেছেন সবসময়। নেই বড়ো কোনো পুরস্কার; কেবল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট, এবং ২০১৯-এ কলকাতার শেরিফ হওয়া
'চৌরঙ্গী' অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। এটি ১৯৬২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। অরুণাভ সিংহ উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেটি ২০০৭ সালে ভোডাফোন ক্রসওয়ার্ড বুক প্রাইজ জয় করে। এছাড়া ২০১০ সালে উপন্যাসটি ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেন ফিকশন প্রাইজও জয় করে।এক কথায় 'চৌরঙ্গী' চিহ্নিত করে প্রদীপের পাদদেশের অন্ধকারকে। ১৯৫০ এর দশকের মধ্য পর্যায়ে মহানগরের উচ্চকোটি অভিজাত হোটেলকে (শাজাহান) কেন্দ্র করে বহুস্তরিক জীবন ও যাপনের বহুমাত্রিক ছবি চিত্রিত উপন্যাসে। কথকের চোখ দিয়ে দেখা হোটেল ম্যানেজার মার্কো পোলো সাহেবের গল্প, যিনি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান তার প্রিয়জনকে; আছেন সহকর্মী অসাধারণ এক মানুষ সত্যসুন্দর বোস (মি. স্যাটা বোস)- যিনি সবকিছুতে জড়িয়ে থেকেও যেন কোনও কিছুতে নেই। আছে গ্রিক ভাস্কর্যের মতো অপরূপ সৌন্দর্যের মানুষ ড. সাদারল্যান্ডেরও গল্প। নিজে পথ হারিয়েও অন্যদের পথপ্রদর্শক যিনি। উপন্যাসের কাহিনীবিন্যাসে ঔপন্যাসিকের ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা ছায়া ফেলেছে। জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত
শংকরের সঙ্গে কার্জন পার্কে একদিন হঠাৎ করে তাঁর অতি পরিচিত বায়রন সাহেবের সাক্ষাৎ। সেই সূত্রে হোটেল রিসেপশনে চাকরি হয়। নানা রঙের মানুষকে দেখা। 'স্যাটা বোস' গড়ে উঠেছে একাধিক ব্যক্তির মিশেলে। ইস্টার্ন রেলওয়ের এক ভদ্রলোক সত্যসুন্দর বসু নিজেকে স্যাটা বোস বলতেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্টের কালেকটর অফ এক্সাইজ অমিয় চক্রবর্তীর সহায়তায় তেলেবিভিন্ন অভিজাত হোটেলে অবাধে বিচরনের সুযোগ পান যা তাঁর উপন্যাস রচনায় অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখে। এঁর অভিভাবকসুলভ আচরণও স্যাটা বোস চরিত্রায়নে প্রভাব ফেলেছে। ছোটো বড়ো অজস্র চরিত্রের কান্না, হাসি, লোভ, অনৈতিকতা, স্বার্থ ত্যাগ প্রভৃতি সমন্বিত ট্র্যাজিক পরিণতি বিষাদঘন হয়ে কথককে বিস্মিত বিরক্ত ক্লান্ত করে। এরই মধ্যে ফল্গু স্রোতের মতো
প্রবাহিত হয় প্রেম।
Weight:598 gm
VARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
লেখক পরিচিতিঃ পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিক। ইংরেজ শাসন শেষ হয়ে গেলেও, তখনও ভারত ছাড়েননি সাহেবরা। কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানকারই হাইকোর্টে তখন ওকালতি করছেন এক ইংরেজ ব্যারিস্টার— নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েল। তাঁর কাছে হাজির হলেন এক বাঙালি তরুণ। কিন্তু বড় নামে উচ্চারণে অসুবিধে। অতএব, ছোটো হল নাম। সেদিন থেকেই, ‘মণিশংকর মুখোপাধ্যায়’ হয়ে গেলেন ‘শংকর'। ১৯৩৩ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বপরিবারে হাওড়ায় চলে আসা ও বেড়ে ওঠা, বিচিত্র কর্মসংস্থান ও সাহিত্য সাধনা। বড়ো বড়ো সাহিত্যের আসর এড়িয়ে গেছেন সবসময়। নেই বড়ো কোনো পুরস্কার; কেবল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট, এবং ২০১৯-এ কলকাতার শেরিফ হওয়া
'চৌরঙ্গী' অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। এটি ১৯৬২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। অরুণাভ সিংহ উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেটি ২০০৭ সালে ভোডাফোন ক্রসওয়ার্ড বুক প্রাইজ জয় করে। এছাড়া ২০১০ সালে উপন্যাসটি ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেন ফিকশন প্রাইজও জয় করে।এক কথায় 'চৌরঙ্গী' চিহ্নিত করে প্রদীপের পাদদেশের অন্ধকারকে। ১৯৫০ এর দশকের মধ্য পর্যায়ে মহানগরের উচ্চকোটি অভিজাত হোটেলকে (শাজাহান) কেন্দ্র করে বহুস্তরিক জীবন ও যাপনের বহুমাত্রিক ছবি চিত্রিত উপন্যাসে। কথকের চোখ দিয়ে দেখা হোটেল ম্যানেজার মার্কো পোলো সাহেবের গল্প, যিনি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান তার প্রিয়জনকে; আছেন সহকর্মী অসাধারণ এক মানুষ সত্যসুন্দর বোস (মি. স্যাটা বোস)- যিনি সবকিছুতে জড়িয়ে থেকেও যেন কোনও কিছুতে নেই। আছে গ্রিক ভাস্কর্যের মতো অপরূপ সৌন্দর্যের মানুষ ড. সাদারল্যান্ডেরও গল্প। নিজে পথ হারিয়েও অন্যদের পথপ্রদর্শক যিনি। উপন্যাসের কাহিনীবিন্যাসে ঔপন্যাসিকের ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা ছায়া ফেলেছে। জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত
শংকরের সঙ্গে কার্জন পার্কে একদিন হঠাৎ করে তাঁর অতি পরিচিত বায়রন সাহেবের সাক্ষাৎ। সেই সূত্রে হোটেল রিসেপশনে চাকরি হয়। নানা রঙের মানুষকে দেখা। 'স্যাটা বোস' গড়ে উঠেছে একাধিক ব্যক্তির মিশেলে। ইস্টার্ন রেলওয়ের এক ভদ্রলোক সত্যসুন্দর বসু নিজেকে স্যাটা বোস বলতেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্টের কালেকটর অফ এক্সাইজ অমিয় চক্রবর্তীর সহায়তায় তেলেবিভিন্ন অভিজাত হোটেলে অবাধে বিচরনের সুযোগ পান যা তাঁর উপন্যাস রচনায় অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখে। এঁর অভিভাবকসুলভ আচরণও স্যাটা বোস চরিত্রায়নে প্রভাব ফেলেছে। ছোটো বড়ো অজস্র চরিত্রের কান্না, হাসি, লোভ, অনৈতিকতা, স্বার্থ ত্যাগ প্রভৃতি সমন্বিত ট্র্যাজিক পরিণতি বিষাদঘন হয়ে কথককে বিস্মিত বিরক্ত ক্লান্ত করে। এরই মধ্যে ফল্গু স্রোতের মতো
প্রবাহিত হয় প্রেম।