মতি নন্দী (১০ জুলাই ১৯৩১-৩ জানুয়ারী ২০১০) ছিলেন বাংলার বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও স্মরণীয় সাহিত্যিক। তিনি স্কটিশচার্চ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক হন মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে। সাংবাদিকতা পুরষ্কারের প্রথম সংস্করণের গ্র্যান্ড ফাইনালে চিহ্নিত করার জন্য তিনি একটি চমকপ্রদ অনুষ্ঠানে জীবনকালের কৃতিত্বের পুরস্কার (২০০৮) ভূষিত হন। তাঁর সাংবাদিকতায় নতুন অনেক শব্দ প্রযুক্ত হয়েও তাঁর সাহিত্যের ভাষা ছিলো তা থেকে স্বতন্ত্র। জীবনের অনেক গভীর ও গোপন অনুভূতি তিনি এমন স্পষ্ট, তীক্ষ্ণ ও অনাসক্তভাবে ব্যক্ত করতেন, ইতিপূর্বে যা বিশেষ চোখে পড়েনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, এই দিক থেকে তিনি কিছুটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রভৃতি।
মতি নন্দীর কিশোর সাহিত্যের প্রধানতম ভিত্তি খেলা। খেলা, খেলার জগৎ ও খেলার অনুষঙ্গকে কেন্দ্র করে আবর্তিত কৈশোরের বিভিন্ন আবেগ অনুভূতি উত্থান পতন ভাঙা গড়ার আলেখ্য হয়ে উঠেছে রচনাগুলি। কোনো ক্ষেত্রে গল্প উপন্যাসগুলি ঈষৎ লঘুচালের। কিন্তু বর্ণনায় কিংবা বিধৃতিতে কোনও শৈথিল্য প্রকাশ পায়নি। যেমন "কলাবতী" উপন্যাস বকদিঘির মুখুজ্জেবাড়ী আর আটঘরার সিংহীবাড়ী- এই দুই বনেদী বাড়ীর মধ্যে 'বয়স্কদের ছেলেমানুষি রাইভালরি'-র উপখ্যান। এর মাঝে কলাবতীর ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। ক্রিকেট আর ভালোবাসা একাকার এখানে। কিশোর সাহিত্যের যে প্রচলিত জগৎ- অ্যাডভেঞ্চার, কল্পবিজ্ঞান, দুঃসাহসিক অভিযান, রোমাঞ্চ, অতিপ্রাকৃতরস অথবা গোয়েন্দা কাহিনী কিংবা রম্য রচনার পরিমণ্ডলের বাইরে এক নতুন ধরনের কিশোর উপাখ্যান পরিবেশন করে মতি নন্দী ছোটোদের মন জয় করে নিয়েছেন। তবে রচনা নৈপুণ্যে তা "বড়োদের" কিশোরমনেও আসন পেতেছে। বিষয়সীমার এমন ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রকৃতই অভিনব। এদিক থেকে কিশোর সাহিত্যে মতি নন্দীর স্থান বিশিষ্ট। খেলতে খেলতে যারা বেড়ে উঠছে, তাদের কাছে এই কাহিনীগুলির জনপ্রিয়তার উৎস খেলাধূলার পরিচিত প্রতিচ্ছবি তো বটেই; তা ছাড়াও খেলার সূত্রে যে-লড়াই আর হারজিতের কথা বলা হয়েছে এইসব গল্পে, উপন্যাসে সেই দিকগুলি কিশোর-পাঠকদের আলোড়িত করে, তারা আত্মীয়তা অনুভব করে এই গল্প উপন্যাসের সঙ্গে। "স্টাইকার" উপন্যাসের শুরুতেই প্রসূনের খেলার ব্যাপারে ব্রাজিলের স্যানটোস ক্লাবের ম্যানেজার ও 'অনিল ভটচাজের' কথোপকথনে ফুটবলের অনুপুঙ্খ বর্ণনা, চোট, চিকিৎসা না পাওয়ার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা, এবং উত্তর কলকাতার পাড়া সংস্কৃতি বিশ্বস্তভাবে ফুটে উঠেছে। 'জীবন অনন্ত', 'অপরাজিত আনন্দ', 'ননীদা নট আউট' খেলার অনুশীলন, উত্তেজনা, ক্লাব, পাড়া, মাঠ, বন্ধু, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, আনন্দ, অসহায়তা, খেলার নেপথ্যের আলো-আঁধার, প্রবঞ্চনা ইত্যাদি নানান কোণ থেকে সর্বাঙ্গীণ ও বিচিত্র ছবি সাহিত্য রূপ পেয়েছে লেখকের কলমে।
VARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
মতি নন্দী (১০ জুলাই ১৯৩১-৩ জানুয়ারী ২০১০) ছিলেন বাংলার বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও স্মরণীয় সাহিত্যিক। তিনি স্কটিশচার্চ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক হন মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে। সাংবাদিকতা পুরষ্কারের প্রথম সংস্করণের গ্র্যান্ড ফাইনালে চিহ্নিত করার জন্য তিনি একটি চমকপ্রদ অনুষ্ঠানে জীবনকালের কৃতিত্বের পুরস্কার (২০০৮) ভূষিত হন। তাঁর সাংবাদিকতায় নতুন অনেক শব্দ প্রযুক্ত হয়েও তাঁর সাহিত্যের ভাষা ছিলো তা থেকে স্বতন্ত্র। জীবনের অনেক গভীর ও গোপন অনুভূতি তিনি এমন স্পষ্ট, তীক্ষ্ণ ও অনাসক্তভাবে ব্যক্ত করতেন, ইতিপূর্বে যা বিশেষ চোখে পড়েনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, এই দিক থেকে তিনি কিছুটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রভৃতি।
মতি নন্দীর কিশোর সাহিত্যের প্রধানতম ভিত্তি খেলা। খেলা, খেলার জগৎ ও খেলার অনুষঙ্গকে কেন্দ্র করে আবর্তিত কৈশোরের বিভিন্ন আবেগ অনুভূতি উত্থান পতন ভাঙা গড়ার আলেখ্য হয়ে উঠেছে রচনাগুলি। কোনো ক্ষেত্রে গল্প উপন্যাসগুলি ঈষৎ লঘুচালের। কিন্তু বর্ণনায় কিংবা বিধৃতিতে কোনও শৈথিল্য প্রকাশ পায়নি। যেমন "কলাবতী" উপন্যাস বকদিঘির মুখুজ্জেবাড়ী আর আটঘরার সিংহীবাড়ী- এই দুই বনেদী বাড়ীর মধ্যে 'বয়স্কদের ছেলেমানুষি রাইভালরি'-র উপখ্যান। এর মাঝে কলাবতীর ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। ক্রিকেট আর ভালোবাসা একাকার এখানে। কিশোর সাহিত্যের যে প্রচলিত জগৎ- অ্যাডভেঞ্চার, কল্পবিজ্ঞান, দুঃসাহসিক অভিযান, রোমাঞ্চ, অতিপ্রাকৃতরস অথবা গোয়েন্দা কাহিনী কিংবা রম্য রচনার পরিমণ্ডলের বাইরে এক নতুন ধরনের কিশোর উপাখ্যান পরিবেশন করে মতি নন্দী ছোটোদের মন জয় করে নিয়েছেন। তবে রচনা নৈপুণ্যে তা "বড়োদের" কিশোরমনেও আসন পেতেছে। বিষয়সীমার এমন ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রকৃতই অভিনব। এদিক থেকে কিশোর সাহিত্যে মতি নন্দীর স্থান বিশিষ্ট। খেলতে খেলতে যারা বেড়ে উঠছে, তাদের কাছে এই কাহিনীগুলির জনপ্রিয়তার উৎস খেলাধূলার পরিচিত প্রতিচ্ছবি তো বটেই; তা ছাড়াও খেলার সূত্রে যে-লড়াই আর হারজিতের কথা বলা হয়েছে এইসব গল্পে, উপন্যাসে সেই দিকগুলি কিশোর-পাঠকদের আলোড়িত করে, তারা আত্মীয়তা অনুভব করে এই গল্প উপন্যাসের সঙ্গে। "স্টাইকার" উপন্যাসের শুরুতেই প্রসূনের খেলার ব্যাপারে ব্রাজিলের স্যানটোস ক্লাবের ম্যানেজার ও 'অনিল ভটচাজের' কথোপকথনে ফুটবলের অনুপুঙ্খ বর্ণনা, চোট, চিকিৎসা না পাওয়ার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা, এবং উত্তর কলকাতার পাড়া সংস্কৃতি বিশ্বস্তভাবে ফুটে উঠেছে। 'জীবন অনন্ত', 'অপরাজিত আনন্দ', 'ননীদা নট আউট' খেলার অনুশীলন, উত্তেজনা, ক্লাব, পাড়া, মাঠ, বন্ধু, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, আনন্দ, অসহায়তা, খেলার নেপথ্যের আলো-আঁধার, প্রবঞ্চনা ইত্যাদি নানান কোণ থেকে সর্বাঙ্গীণ ও বিচিত্র ছবি সাহিত্য রূপ পেয়েছে লেখকের কলমে।