সুনীলের গঙ্গোপাধ্যায়ের (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতায়। প্রতিষ্ঠিত জীবন অতিবাহিত হয় দক্ষিণ কলকাতায়। বাবা দুরন্ত সুনীলকে ঘরে আটকে রাখার জন্য টেনিসনের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করার কাজ দিয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর কবিতা-প্রীতির শুরু। ১৯৫৩ সাল থেকে সুনীল 'কৃত্তিবাস' নামে একটি কবিতা-পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'একা এবং কয়েকজন' প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ'। আবার নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের এক পৃথক সত্তাও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 'কাকাবাবু' তাঁর একটি বিশিষ্ট চরিত্র-চিত্রণ। বিশ শতকের শেষভাগের প্রথিতযশা এই সাহিত্যিক মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক ধরে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, ভ্রমণকাহিনীর স্রষ্টা, প্রবন্ধ-রচয়িতা অন্য দিকে সম্পাদক, সাংবাদিক এবং অনুবাদক। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ 'আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি', 'হঠাৎ নীরার জন্য', 'রাত্রির রঁদেভু', 'অর্ধেক জীবন', 'অরণ্যের দিনরাত্রি', 'প্রথম আলো', 'সেই সময়', 'পূর্ব পশ্চিম', 'ভানু ও রাণু', 'মনের মানুষ' ইত্যাদি।
সাহিত্যে লেখকের আত্ম জীবনের ছবি ফুটে উঠবে- এ আশ্চর্য কিছু নয়। বরং আত্ম জীবনকে সম্পূর্ণত অস্বীকার করাই সম্ভবত আশ্চর্যের বিষয়। বর্তমান গ্রন্থ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যক্তি অভিজ্ঞতার তেমনই একটি উপাখ্যান। আনোয়ার ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় অধ্যাপক শামীমের স্ত্রী। যিনি উপন্যাসের কেন্দ্রে। কিংবা কথাকারের জীবনের সঙ্গে কখনো সমান্তরাল জীবনে, কখনো বা কাছে, দূরে তাঁর অবস্থান। এই অধ্যাপক লেখকের বিশেষ বন্ধু। ঢাকায় এলে সুনীল সস্ত্রীক তাঁর বারীতে অংশ নেন অন্তরঙ্গ আড্ডায়। লেখক ও তাঁর স্ত্রী স্বাতী দুজনেরই আনোয়ার ও শামীমের দাম্পত্য অত্যন্ত সুন্দর বলে মনে হয়। অতঃপর সহসা একদিন আনোয়ার একাকী কলকাতায় এসে অনেক কষ্ট স্বীকার করে লেখকের ঠিকানা খুঁজে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত হন। বিস্মিত দম্পতি আরও বিস্মিত হন যখন শোনেন জীবিকার অন্বেষণে আনোয়ার সৌদি আরব পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর। আনোয়ারকে বিরত করতে ব্যর্থ লেখক অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন আনোয়ারের নারী পাচার চক্রে পথ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায়। তবু ক্রমে লেখক নিজ জীবনের পরিসরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই পর্বে লেখকের বন্ধুমহল, মধ্যরাতে কলকাতা অভিযান ইত্যাদির বর্ণনা থেকে তাঁর ব্যক্তিগত যাপন, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, প্রকৃতি আভাসিত হয়। এরপর আকস্মিকভাবেই একদিন আনোয়ার ফিরে আসেন লেখক পত্নী স্বাতীর কাছে গচ্ছিত রাখা গয়না ফেরত নিতে। তখন তিনি গর্ভবতী। এই গর্ভসঞ্চার রহস্যময়। নিজেকে দূরত্বে রাখতে চেয়েও লেখক যেন আনোয়ারের জীবনে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্রোত আত্মজৈবনিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও কিভাবে আনোয়ারের উপাখ্যান হয়ে ওঠে তা-ই উপন্যাসটির উপজীব্য। বাস্তব ও কল্পনার আলোছায়া উপন্যাসকে করেছে জীবনমর্মর।
Weight:636 gm
VARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
সুনীলের গঙ্গোপাধ্যায়ের (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতায়। প্রতিষ্ঠিত জীবন অতিবাহিত হয় দক্ষিণ কলকাতায়। বাবা দুরন্ত সুনীলকে ঘরে আটকে রাখার জন্য টেনিসনের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করার কাজ দিয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর কবিতা-প্রীতির শুরু। ১৯৫৩ সাল থেকে সুনীল 'কৃত্তিবাস' নামে একটি কবিতা-পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'একা এবং কয়েকজন' প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ'। আবার নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের এক পৃথক সত্তাও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 'কাকাবাবু' তাঁর একটি বিশিষ্ট চরিত্র-চিত্রণ। বিশ শতকের শেষভাগের প্রথিতযশা এই সাহিত্যিক মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক ধরে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, ভ্রমণকাহিনীর স্রষ্টা, প্রবন্ধ-রচয়িতা অন্য দিকে সম্পাদক, সাংবাদিক এবং অনুবাদক। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ 'আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি', 'হঠাৎ নীরার জন্য', 'রাত্রির রঁদেভু', 'অর্ধেক জীবন', 'অরণ্যের দিনরাত্রি', 'প্রথম আলো', 'সেই সময়', 'পূর্ব পশ্চিম', 'ভানু ও রাণু', 'মনের মানুষ' ইত্যাদি।
সাহিত্যে লেখকের আত্ম জীবনের ছবি ফুটে উঠবে- এ আশ্চর্য কিছু নয়। বরং আত্ম জীবনকে সম্পূর্ণত অস্বীকার করাই সম্ভবত আশ্চর্যের বিষয়। বর্তমান গ্রন্থ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যক্তি অভিজ্ঞতার তেমনই একটি উপাখ্যান। আনোয়ার ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় অধ্যাপক শামীমের স্ত্রী। যিনি উপন্যাসের কেন্দ্রে। কিংবা কথাকারের জীবনের সঙ্গে কখনো সমান্তরাল জীবনে, কখনো বা কাছে, দূরে তাঁর অবস্থান। এই অধ্যাপক লেখকের বিশেষ বন্ধু। ঢাকায় এলে সুনীল সস্ত্রীক তাঁর বারীতে অংশ নেন অন্তরঙ্গ আড্ডায়। লেখক ও তাঁর স্ত্রী স্বাতী দুজনেরই আনোয়ার ও শামীমের দাম্পত্য অত্যন্ত সুন্দর বলে মনে হয়। অতঃপর সহসা একদিন আনোয়ার একাকী কলকাতায় এসে অনেক কষ্ট স্বীকার করে লেখকের ঠিকানা খুঁজে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত হন। বিস্মিত দম্পতি আরও বিস্মিত হন যখন শোনেন জীবিকার অন্বেষণে আনোয়ার সৌদি আরব পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর। আনোয়ারকে বিরত করতে ব্যর্থ লেখক অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন আনোয়ারের নারী পাচার চক্রে পথ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায়। তবু ক্রমে লেখক নিজ জীবনের পরিসরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই পর্বে লেখকের বন্ধুমহল, মধ্যরাতে কলকাতা অভিযান ইত্যাদির বর্ণনা থেকে তাঁর ব্যক্তিগত যাপন, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, প্রকৃতি আভাসিত হয়। এরপর আকস্মিকভাবেই একদিন আনোয়ার ফিরে আসেন লেখক পত্নী স্বাতীর কাছে গচ্ছিত রাখা গয়না ফেরত নিতে। তখন তিনি গর্ভবতী। এই গর্ভসঞ্চার রহস্যময়। নিজেকে দূরত্বে রাখতে চেয়েও লেখক যেন আনোয়ারের জীবনে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্রোত আত্মজৈবনিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও কিভাবে আনোয়ারের উপাখ্যান হয়ে ওঠে তা-ই উপন্যাসটির উপজীব্য। বাস্তব ও কল্পনার আলোছায়া উপন্যাসকে করেছে জীবনমর্মর।