অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়(১৯৩৪-২০১৯) স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে এক বিশিষ্ট নাম। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমানে বাংলাদেশে)। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। তিনি ছিলেন বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক। সাংবাদিকতা ছাড়াও করেছেন অজস্র ধরনের কাজ। 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে তাঁর স্থায়ী আসন হয়েছিলো। তাঁর কলম থেকে একে একে সৃষ্টি হয়, 'মানুষের ঘরবাড়ি', 'ঈশ্বরের বাগান', 'অলৌকিক জলযান'-এর মতো অনন্য সৃষ্টি। প্রতিবেশ, পরিস্থিতি ও চরিত্র বর্ণনার নৈপুণ্যে তাঁর রচনাগুলি বিশ্বস্ত দলিলের মতো। 'আউড়ি বাউড়ি', 'ট্রেন বেলাইন হলে', 'স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে না', 'কঠিন হ য ব র ল', 'দেরির এখন বয়েস হয়েছে' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটোগল্প। পরিবারের পরম্পরা প্রায়শই উপস্থিত হয়েছে গল্পগুলিতে। লিখেছেন 'একটি জলের রেখা ও ওরা তিন জন', 'হীরের চেয়েও দামি' প্রভৃতি কিশোর উপন্যাস। প্রসঙ্গত, নামকরণের দিক থেকেও তাঁর গল্প উপন্যাসগুলি স্বতন্ত্র। পেয়েছেন ভুয়াল্কা পুরস্কার, সুরমা চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্মৃতি পুরস্কার (আই.আই.পি.এম প্রবর্তিত) ও অন্যান্য।
একজন মানুষ যখন কখনো নাবিক, কখনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কখনো ট্রাকক্লিনার, কখনো কারখানার পরিচালক, কখনো প্রকাশন সংস্থার উপদেষ্টা – এত বৈচিত্র্যময় জীবিকা নির্বাহ করেন তখন নানাকৌণিক দৃষ্টির সেই সমস্ত জীবন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তাঁর সাহিত্যবিশ্ব হয়ে ওঠে বিপুল রসবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে বাংলা উপন্যাসের মহাকাব্যিক কায়া নির্মাণ সেই সময়ে ব্যতিক্রমী ভাবে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে যে সময়ে উপন্যাসের বিস্তার কমতে কমতে নভেলেটের প্রাচুর্য দেখা দিয়েছে। তাঁর উপন্যাস দীর্ঘ, বহুপার্বিক; সেখানে অজস্র চরিত্র ও বিভিন্ন পরিবেশের ভিড়। তাঁর উপন্যাসের আর একটি দিক হল ভ্রমণ। এক পথ চলার গল্প থাকে সেখানে। সমুদ্র ও বন্দরের একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে তাঁর উপন্যাসে। তাঁর সমকালীন সুনীল, শীর্ষেন্দু, সন্দীপন প্রমুখ কথাকাররা যেখানে মূলত নাগরিক জীবনের ভাষ্যকার, সেখানে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে বাংলার গ্রাম জীবন নিপুণ অন্তরঙ্গতায় ধরা দিয়েছে। অনেক সময় তিনি ধারাবাহিক ভাবে আমাদের জন-জীবনের নানা কৃষ্টি আচরণকে
তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে কখনো উপস্থাপিত হয়েছে প্রতীকী (symbolic) তাৎপর্যও। দাঙ্গা ও দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অস্তিত্বের সংগ্রাম তাঁর উপন্যাসের একটি মুখ্য স্বর। নির্দিষ্ট ও আঞ্চলিক পটে জীবনের যে রূপ চিত্রণ তার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়েছে অখন্ড ও চিরায়ত জীবনবোধ। তাঁর সাহিত্যে অপর মুখ্য স্বর যৌনতা। প্রাসঙ্গিক একটি সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তাঁর শিল্পবোধে ও জীবনবোধে যৌনতার স্থান চিহ্নিত হয়ঃ "এটা আমার কাছে একেবারে স্বাভবিক। সুদীর্ঘকাল ধরে আমি যেটা উপলব্ধি করেছি, আমরা যে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আছি, তার কারণ এর মধ্যে নারী আছে। যদি নারী না থাকত তাহলে এই সমাজ, রাজনীতি, শিল্পসৃষ্টি, কিছুই থাকত না। এই থাকাটাই মূল্যবান। আর এর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে যৌনতা। আমি মনে করি যৌনতাই প্রাণ, যৌনতাই সৃষ্টির উৎস, যৌনতাই ঈশ্বর। যৌনতা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয়" (সাক্ষাৎকার, অলোক রায়, বইয়ের দেশ, এপ্রিল-জুন ২০১২)। বিচিত্রধর্মী ছ'টি উপন্যাস নিয়ে এই গ্রন্থ।
SKU-FXRRRUUMVIYVARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়(১৯৩৪-২০১৯) স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে এক বিশিষ্ট নাম। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমানে বাংলাদেশে)। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। তিনি ছিলেন বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক। সাংবাদিকতা ছাড়াও করেছেন অজস্র ধরনের কাজ। 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে তাঁর স্থায়ী আসন হয়েছিলো। তাঁর কলম থেকে একে একে সৃষ্টি হয়, 'মানুষের ঘরবাড়ি', 'ঈশ্বরের বাগান', 'অলৌকিক জলযান'-এর মতো অনন্য সৃষ্টি। প্রতিবেশ, পরিস্থিতি ও চরিত্র বর্ণনার নৈপুণ্যে তাঁর রচনাগুলি বিশ্বস্ত দলিলের মতো। 'আউড়ি বাউড়ি', 'ট্রেন বেলাইন হলে', 'স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে না', 'কঠিন হ য ব র ল', 'দেরির এখন বয়েস হয়েছে' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটোগল্প। পরিবারের পরম্পরা প্রায়শই উপস্থিত হয়েছে গল্পগুলিতে। লিখেছেন 'একটি জলের রেখা ও ওরা তিন জন', 'হীরের চেয়েও দামি' প্রভৃতি কিশোর উপন্যাস। প্রসঙ্গত, নামকরণের দিক থেকেও তাঁর গল্প উপন্যাসগুলি স্বতন্ত্র। পেয়েছেন ভুয়াল্কা পুরস্কার, সুরমা চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্মৃতি পুরস্কার (আই.আই.পি.এম প্রবর্তিত) ও অন্যান্য।
একজন মানুষ যখন কখনো নাবিক, কখনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কখনো ট্রাকক্লিনার, কখনো কারখানার পরিচালক, কখনো প্রকাশন সংস্থার উপদেষ্টা – এত বৈচিত্র্যময় জীবিকা নির্বাহ করেন তখন নানাকৌণিক দৃষ্টির সেই সমস্ত জীবন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তাঁর সাহিত্যবিশ্ব হয়ে ওঠে বিপুল রসবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে বাংলা উপন্যাসের মহাকাব্যিক কায়া নির্মাণ সেই সময়ে ব্যতিক্রমী ভাবে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে যে সময়ে উপন্যাসের বিস্তার কমতে কমতে নভেলেটের প্রাচুর্য দেখা দিয়েছে। তাঁর উপন্যাস দীর্ঘ, বহুপার্বিক; সেখানে অজস্র চরিত্র ও বিভিন্ন পরিবেশের ভিড়। তাঁর উপন্যাসের আর একটি দিক হল ভ্রমণ। এক পথ চলার গল্প থাকে সেখানে। সমুদ্র ও বন্দরের একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে তাঁর উপন্যাসে। তাঁর সমকালীন সুনীল, শীর্ষেন্দু, সন্দীপন প্রমুখ কথাকাররা যেখানে মূলত নাগরিক জীবনের ভাষ্যকার, সেখানে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে বাংলার গ্রাম জীবন নিপুণ অন্তরঙ্গতায় ধরা দিয়েছে। অনেক সময় তিনি ধারাবাহিক ভাবে আমাদের জন-জীবনের নানা কৃষ্টি আচরণকে
তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে কখনো উপস্থাপিত হয়েছে প্রতীকী (symbolic) তাৎপর্যও। দাঙ্গা ও দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অস্তিত্বের সংগ্রাম তাঁর উপন্যাসের একটি মুখ্য স্বর। নির্দিষ্ট ও আঞ্চলিক পটে জীবনের যে রূপ চিত্রণ তার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়েছে অখন্ড ও চিরায়ত জীবনবোধ। তাঁর সাহিত্যে অপর মুখ্য স্বর যৌনতা। প্রাসঙ্গিক একটি সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তাঁর শিল্পবোধে ও জীবনবোধে যৌনতার স্থান চিহ্নিত হয়ঃ "এটা আমার কাছে একেবারে স্বাভবিক। সুদীর্ঘকাল ধরে আমি যেটা উপলব্ধি করেছি, আমরা যে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আছি, তার কারণ এর মধ্যে নারী আছে। যদি নারী না থাকত তাহলে এই সমাজ, রাজনীতি, শিল্পসৃষ্টি, কিছুই থাকত না। এই থাকাটাই মূল্যবান। আর এর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে যৌনতা। আমি মনে করি যৌনতাই প্রাণ, যৌনতাই সৃষ্টির উৎস, যৌনতাই ঈশ্বর। যৌনতা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয়" (সাক্ষাৎকার, অলোক রায়, বইয়ের দেশ, এপ্রিল-জুন ২০১২)। বিচিত্রধর্মী ছ'টি উপন্যাস নিয়ে এই গ্রন্থ।