নারায়ণ দেবনাথ (২৫ নভেম্বর ১৯২৫ ― ১৮ জানুয়ারি ২০২২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট কমিক্স শিল্পী। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার শিবপুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থির সময় উপস্থিত হলে তাঁর আর্ট কলেজের শিক্ষায় ছেদ
পড়ে। গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই তাঁর আঁকার সঙ্গে পরিচয় বাঙালি পাঠকের। দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত ছোটদের বই কিংবা ‘শুকতারা’-র পাতা, তরুণ নারায়ণ দেবনাথের অলঙ্করণ তখন থেকেই মুগ্ধ করেছিলো। ষাটের দশকের গোড়ার
দিকে শুকতারার সম্পাদকের অনুরোধে 'হাঁদা ভোঁদার কান্ডকারখানা'র উদ্ভব। সেই থেকেই তাঁর সঙ্গে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের এক অমোঘ সম্পর্ক সূচিত হয়ে যায়। ক্রমে আবির্ভাব ঘটে 'বাঁটুল দি গ্রেট', 'নন্টে ফন্টে', 'বাহাদুর বেড়াল', 'শুঁটকি আর মুটকি',
'ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু' 'পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান', 'গোয়েন্দা কৌশিক রায়'। জনপ্রিয় যেমন হয়েছে তেমনই জনপ্রিয়তা বজায় থেকেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। কমিক্সের ইংরেজী অনুবাদের মাধ্যমে বৃহত্তর পাঠক তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছোনোর
সুযোগ পেয়েছেন।
নামকরণের মাধ্যমে চরিত্রদুটির যে চিহ্নায়ন, কমিক্সের মজাদার গল্পগুলিতে তার সমর্থন মেলে। খানিক নির্বুদ্ধিতা উভয়ের মধ্যেই বর্তমান। তবে ভোঁদার বোকামি অনেকাংশে বেশী। সেই সঙ্গে তার সারল্য তাকে প্রাথমিকভাবে মুশকিলে ফেলে বেশী। কলেবরেও
সে হৃষ্টপুষ্ট। অর্থাৎ তথাকথিত unsmartness-এর বৈশিষ্ট্যগুলি তার মধ্যে লক্ষণীয়। তুলনায় হাঁদা চোস্ত, চেহারাতেও সে নিতান্ত রোগা। দুষ্টুবুদ্ধির ধারক ও বাহক। যদিও শেষ পর্যন্ত আক্কেল সেলামী দিতে হয় তাকেই। আর আছেন তাদের মেজাজী পিসেমশাই
যিনি তাদের দুজনেরই অভিভাবকও, প্রশাসকও। তিনি যেন সেই সাবেক গুরুজন। বিভিন্ন দৌরাত্মের শেষে অধিকাংশ সময় হাঁদার এই পিসেমশাই এর হাতে উত্তমমধ্যম লাভ এবং ভোঁদার নিষ্কৃতি নির্ভেজাল হাসিই ফোটায় মুখে। এছাড়া খুব কম ক্ষেত্রে হাঁদা,
ভোঁদার বাবা, মা কিংবা অন্যান্য চরিত্র উপস্থিত হয়েছে কমিক্সে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই হাঁদার পর্যুদস্ত হওয়া আর ভোঁদার রক্ষা পাওয়ার প্রতি পাঠকেরও সমর্থন থাকে। প্রকৃতপক্ষে, স্রষ্টা সেভাবেই উপস্থাপন করেছেন তাদের। হাঁদা ভোঁদা যেমন ফেলে আসা
কিশোরবেলার সময়কে মনে করায়, নস্টালজিক করে, তেমনই ঠিক এই সময়ের কৈশোরকেও বিগত দিনের কৈশোরক চেতনার রসাস্বাদন করায়। কাজেই এই কমিক্স শেষ অবধি বয়স নির্বিশেষে সব পাঠকেরই হৃদয় অধিকার করে।
VARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
নারায়ণ দেবনাথ (২৫ নভেম্বর ১৯২৫ ― ১৮ জানুয়ারি ২০২২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট কমিক্স শিল্পী। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার শিবপুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থির সময় উপস্থিত হলে তাঁর আর্ট কলেজের শিক্ষায় ছেদ
পড়ে। গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই তাঁর আঁকার সঙ্গে পরিচয় বাঙালি পাঠকের। দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত ছোটদের বই কিংবা ‘শুকতারা’-র পাতা, তরুণ নারায়ণ দেবনাথের অলঙ্করণ তখন থেকেই মুগ্ধ করেছিলো। ষাটের দশকের গোড়ার
দিকে শুকতারার সম্পাদকের অনুরোধে 'হাঁদা ভোঁদার কান্ডকারখানা'র উদ্ভব। সেই থেকেই তাঁর সঙ্গে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের এক অমোঘ সম্পর্ক সূচিত হয়ে যায়। ক্রমে আবির্ভাব ঘটে 'বাঁটুল দি গ্রেট', 'নন্টে ফন্টে', 'বাহাদুর বেড়াল', 'শুঁটকি আর মুটকি',
'ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু' 'পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান', 'গোয়েন্দা কৌশিক রায়'। জনপ্রিয় যেমন হয়েছে তেমনই জনপ্রিয়তা বজায় থেকেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। কমিক্সের ইংরেজী অনুবাদের মাধ্যমে বৃহত্তর পাঠক তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছোনোর
সুযোগ পেয়েছেন।
নামকরণের মাধ্যমে চরিত্রদুটির যে চিহ্নায়ন, কমিক্সের মজাদার গল্পগুলিতে তার সমর্থন মেলে। খানিক নির্বুদ্ধিতা উভয়ের মধ্যেই বর্তমান। তবে ভোঁদার বোকামি অনেকাংশে বেশী। সেই সঙ্গে তার সারল্য তাকে প্রাথমিকভাবে মুশকিলে ফেলে বেশী। কলেবরেও
সে হৃষ্টপুষ্ট। অর্থাৎ তথাকথিত unsmartness-এর বৈশিষ্ট্যগুলি তার মধ্যে লক্ষণীয়। তুলনায় হাঁদা চোস্ত, চেহারাতেও সে নিতান্ত রোগা। দুষ্টুবুদ্ধির ধারক ও বাহক। যদিও শেষ পর্যন্ত আক্কেল সেলামী দিতে হয় তাকেই। আর আছেন তাদের মেজাজী পিসেমশাই
যিনি তাদের দুজনেরই অভিভাবকও, প্রশাসকও। তিনি যেন সেই সাবেক গুরুজন। বিভিন্ন দৌরাত্মের শেষে অধিকাংশ সময় হাঁদার এই পিসেমশাই এর হাতে উত্তমমধ্যম লাভ এবং ভোঁদার নিষ্কৃতি নির্ভেজাল হাসিই ফোটায় মুখে। এছাড়া খুব কম ক্ষেত্রে হাঁদা,
ভোঁদার বাবা, মা কিংবা অন্যান্য চরিত্র উপস্থিত হয়েছে কমিক্সে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই হাঁদার পর্যুদস্ত হওয়া আর ভোঁদার রক্ষা পাওয়ার প্রতি পাঠকেরও সমর্থন থাকে। প্রকৃতপক্ষে, স্রষ্টা সেভাবেই উপস্থাপন করেছেন তাদের। হাঁদা ভোঁদা যেমন ফেলে আসা
কিশোরবেলার সময়কে মনে করায়, নস্টালজিক করে, তেমনই ঠিক এই সময়ের কৈশোরকেও বিগত দিনের কৈশোরক চেতনার রসাস্বাদন করায়। কাজেই এই কমিক্স শেষ অবধি বয়স নির্বিশেষে সব পাঠকেরই হৃদয় অধিকার করে।