লেখক পরিচিতিঃ "..আমার নাম নলিনী বেরা, বাবু গো, আমি মেদিনীপুরের ‘ছানা’/মায়ের নাম শালফুল বাপের নাম শালপাতা বেরা"(‘শালপাতা শালফুল’)। নলিনী বেরার জন্ম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুরের নিকট বাছুরখোয়াড় গ্রামে (২০ জুলাই, ১৯৫২)। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, মহিষকুড়ার উপকথা,খোয়াবনামা, ঢোঁড়াই চরিত মানস, তিস্তাপারের বৃত্তান্তে যে অন্ত্যজ শ্রেণি বর্ণিত, নলিনী বেরা স্বয়ং তার প্রতিনিধি। ফলে কল্পনা আর বাস্তবের প্রভেদ মুছে যায় তাঁর সাহিত্যে।
উড়িষ্যা-ঝাড়খন্ড পশ্চিমবঙ্গের প্রান্ত সীমা সংলগ্ন নদীকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহের নতুনতর মর্মরধ্বনি এই উপন্যাস। আঙ্গিকগতভাবেও এই উপন্যাস অভিনব। সুনির্দিষ্ট গল্পের বদলে সুবর্ণরেখার স্রোতে ও পলিসঞ্চয়ে সম্পৃক্ত অগুন্তি সুখদুখময় জীবনগাথার কলতান উপন্যাসটিকে কোলাজধর্মী করেছে। এ উপন্যাসের ভৌগোলিক অবস্থানটি অদ্ভুত। এখানে নদী তীরে বছরের শেষ দিনে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার মানুষেরা 'বালিজাত্' উৎসব পালন করেন।
মহাভারতের কালে অজ্ঞাতবাস পর্বে এখানে বারিতর্পণ করেছিলেন যুধিষ্ঠির। এ উৎসব তারই স্মৃতিতে। সে স্মৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকে বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বর্তমানও। মানচিত্রের নতুন রেখায় এ অঞ্চল ওড়িশাতে ঢুকে পড়ে আবার বেরিয়েও আসে। কিন্তু জীবন তো মানচিত্রকে ছাপিয়ে যায়। তাই কথকের জামাইবাবু আসেন ওড়িশা থেকে, বিহার মুলুক থেকে ছেলের নাচনি বউ মেলে আর উপন্যাসের কথক ললিনের কৈশোরের কাম ও কামনা জড়িত রসনাবালা ভিন রাজ্যে চলে যায়। সেই সঙ্গে নানান মিশ্রণে ভাষাও নতুন রূপ নেয়। হাটুয়া ভাষা তৈরি হয়। উঠোনে বসে ছোটরা পড়ে— দেয়ার ইজ এ ফ্রগো, সেঠিরে গুট্যে ব্যাঙো। এই নতুন শব্দের প্রাসঙ্গিক নির্মাণ ('নিধূম সে', 'রুমরুম বসি') লেখকের সততা ও স্পর্ধার পরিচয়বাহী। উল্লেখ্য, উপন্যাসের শেষে অর্থ-তালিকা (glossary) তথাকথিত অপরিচিত শব্দাবলীর প্রচলিত অর্থ সম্পাদনে অনিবার্য ভূমিকা নিয়েছে। 'পদ্মল ঘা' (কর্কট রোগ বা cancer), 'দেড়ইয়া' (সঙ্গম) প্রভৃতি প্রসঙ্গত স্মরণীয়। 'সাব-অলটার্ন'-এর মৃত্তিকালগ্ন সোঁদা গন্ধ মৌতাত ছড়িয়ে রাখে উপন্যাসজুড়ে।
Weight:541 gm
VARIANT | SELLER | PRICE | QUANTITY |
---|
লেখক পরিচিতিঃ "..আমার নাম নলিনী বেরা, বাবু গো, আমি মেদিনীপুরের ‘ছানা’/মায়ের নাম শালফুল বাপের নাম শালপাতা বেরা"(‘শালপাতা শালফুল’)। নলিনী বেরার জন্ম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুরের নিকট বাছুরখোয়াড় গ্রামে (২০ জুলাই, ১৯৫২)। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, মহিষকুড়ার উপকথা,খোয়াবনামা, ঢোঁড়াই চরিত মানস, তিস্তাপারের বৃত্তান্তে যে অন্ত্যজ শ্রেণি বর্ণিত, নলিনী বেরা স্বয়ং তার প্রতিনিধি। ফলে কল্পনা আর বাস্তবের প্রভেদ মুছে যায় তাঁর সাহিত্যে।
উড়িষ্যা-ঝাড়খন্ড পশ্চিমবঙ্গের প্রান্ত সীমা সংলগ্ন নদীকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহের নতুনতর মর্মরধ্বনি এই উপন্যাস। আঙ্গিকগতভাবেও এই উপন্যাস অভিনব। সুনির্দিষ্ট গল্পের বদলে সুবর্ণরেখার স্রোতে ও পলিসঞ্চয়ে সম্পৃক্ত অগুন্তি সুখদুখময় জীবনগাথার কলতান উপন্যাসটিকে কোলাজধর্মী করেছে। এ উপন্যাসের ভৌগোলিক অবস্থানটি অদ্ভুত। এখানে নদী তীরে বছরের শেষ দিনে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার মানুষেরা 'বালিজাত্' উৎসব পালন করেন।
মহাভারতের কালে অজ্ঞাতবাস পর্বে এখানে বারিতর্পণ করেছিলেন যুধিষ্ঠির। এ উৎসব তারই স্মৃতিতে। সে স্মৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকে বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বর্তমানও। মানচিত্রের নতুন রেখায় এ অঞ্চল ওড়িশাতে ঢুকে পড়ে আবার বেরিয়েও আসে। কিন্তু জীবন তো মানচিত্রকে ছাপিয়ে যায়। তাই কথকের জামাইবাবু আসেন ওড়িশা থেকে, বিহার মুলুক থেকে ছেলের নাচনি বউ মেলে আর উপন্যাসের কথক ললিনের কৈশোরের কাম ও কামনা জড়িত রসনাবালা ভিন রাজ্যে চলে যায়। সেই সঙ্গে নানান মিশ্রণে ভাষাও নতুন রূপ নেয়। হাটুয়া ভাষা তৈরি হয়। উঠোনে বসে ছোটরা পড়ে— দেয়ার ইজ এ ফ্রগো, সেঠিরে গুট্যে ব্যাঙো। এই নতুন শব্দের প্রাসঙ্গিক নির্মাণ ('নিধূম সে', 'রুমরুম বসি') লেখকের সততা ও স্পর্ধার পরিচয়বাহী। উল্লেখ্য, উপন্যাসের শেষে অর্থ-তালিকা (glossary) তথাকথিত অপরিচিত শব্দাবলীর প্রচলিত অর্থ সম্পাদনে অনিবার্য ভূমিকা নিয়েছে। 'পদ্মল ঘা' (কর্কট রোগ বা cancer), 'দেড়ইয়া' (সঙ্গম) প্রভৃতি প্রসঙ্গত স্মরণীয়। 'সাব-অলটার্ন'-এর মৃত্তিকালগ্ন সোঁদা গন্ধ মৌতাত ছড়িয়ে রাখে উপন্যাসজুড়ে।